হার্ট সুস্থ রাখতে দেবী শেঠির পরামর্শ ও কারণ লক্ষণ এবং প্রতিরোধে করণীয়!
উপমহাদেশের আলোচিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. দেবী প্রসাদ শেঠির নাম বাংলাদেশের শিক্ষিত স্বাস্থ্য সচেতন বেশিরভাগ মানুষই জানেন। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের ব্যাঙ্গালোর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে শেঠির নারায়ণা হৃদয়ালয় হাসপাতালটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান হাসপাতাল।
ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি পৃথিবীর ১০ জনের একজন। হার্ট সুস্থ রাখতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের এই চিকিৎসক। হৃদরোগ এড়ানোর জন্য তার দেয়া পরামর্শ নিচে তুলে ধরা হলো:
১. শর্করা এবং চর্বিজাত খাবার কম খেতে হবে। আর আমিষের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।
২. সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন আধা ঘণ্টা করে হাঁটতে হবে। লিফটে চড়া এড়াতে হবে। একটানা বেশি সময় বসে থাকা যাবে না।
৩. ধুমপান ত্যাগ করতে হবে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৫. রক্তচাপ এবং সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৬. শাক জাতীয় নয়, এমন খাবার খাওয়া হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী নয়।
৭. ত্রিশের ওপরে সবার উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।
৮. জীবনে সব কিছু নিখুঁত হবে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। তাই জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।
৯. জগিং করার চেয়ে হাঁটা ভালো। জগিং করলে মানুষ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় এবং জয়েন্টে ব্যথা হয়।
১০. অনিয়মিত খাদ্যাভাস মানুষকে জাঙ্ক ফুডের দিকে ঠেলে দেয়। আর তখনই হজমের জন্য ব্যবহৃত এনজাইমগুলো দ্বিধায় পড়ে যায়। তাই নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, হাঁটাহাঁটি এবং আখরোট খেতে হবে।
১১. হৃদযন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার ফল এবং সবজি। আর সবচেয়ে খারাপ তৈলাক্ত খাবার। যে কোনও তেলই খারাপ।
১২. নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সুগার এবং কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। তাছাড়া রক্তচাপ পরিমাপও জরুরি।
১৩. হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীকে প্রথমে শুইয়ে দিতে হবে। এরপর জিহ্বার নিচে একটি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট রাখতে হবে। যদি পাওয়া যায় তবে অ্যাসপিরিনের পাশাপাশি একটি সরবিট্রেট ট্যাবলেটও রাখতে হবে। এরপর দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।
হার্ট অ্যাটাকের কারণ:
আসুন, জেনে নেই প্রধানত কি কি কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে-
• অতিরিক্ত মাত্রায় ধূমপান করলে বা অ্যালকোহল গ্রহণ করলে
• দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার খেলে
• সবসময় মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে
• রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে
• উচ্চ রক্তচাপ হলে
• ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে
• কায়িক পরিশ্রম না করা
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ:
বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হওয়া, বুক ভার লাগা, বমি বমি ভাব হওয়া, প্রচণ্ড ঘাম হওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, পেট জ্বালা-পোড়া করতে পারে বিশেষ করে পেটের উপরের অংশে জ্বালা-পোড়া হতে পারে, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, চোখে ঝাপসা দেখা যেতে পারে।
এগুলো সম্পর্কে মানুষকে সচেতন থাকা জরুরি। লক্ষণগুলো প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী হাসপাতালে চলে যেতে হবে।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয়ঃ
• ধূমপান বন্ধ করা
• অ্যালকোহল অথবা মাদক নেয়া বন্ধ করা
• মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করা
• ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখা
• ডায়বেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা
• রক্তের চর্বি অর্থাৎ কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা
• নিয়মিত ব্যায়াম করা, প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট
• শরীরের ওজন কমানো
হার্ট অ্যাটাক বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের মৃত্যুঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। এ ঝুঁকি মোকাববেলায় ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং আধুনিক চিকিৎসা খু্বই জরুরি। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সচেতন হয়ে হার্ট অ্যাটাক থেকে দূরে থাকা সম্ভব।