নিঃপ্রাণ এদেশের ফসলি জমি হুমকিতে কৃষি ক্ষেত্র
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা সবুজের সমারহ কৃষি প্রধান দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এদেশর অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখে কৃষিক্ষেত্র থেকে, কিন্তু সেই কৃষিক্ষেত্রের ফসলি জমির মাটি এখন নিঃপ্রাণ হয়ে হুমকির মুখে পড়েছে। এমনটা হওয়ার কারণ হিসেবে কৃষিবিদরা দাবি করেছেন, ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষক জমিতে প্রয়োগ করছে মাটির জন্য বিষাক্ত উপাদান রাসায়ানিক সার ওহরেক রকমের কীটনাশক। আর এ কারণে কৃষি জমির মাটি ফসল উৎপাদনের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কৃষিবিদরা ফসলি জমির মাটি পরীক্ষা করে রিতিমত হতবাক। মাটিতে নেই কোন জৈব্য উপাদান। যেখানে ২৫% জৈব্য উপাদান থাকা প্রয়োজন সেখানে দেশের একতৃত্বীয়াংশ জমিতে আছে ০.৫০%। আর বাকি অংশে একটু বেশি কোথাও ১% কোথাও ১.৫০% যা ফসল উৎপাদনের জন্য একেবারে অনুপযোগী। তবুও কৃষক ফসল উৎপাদন করছে, তবে তাদের খেতে হচ্ছে হিমসিম। ব্যবহার করতে হচ্ছে অতিরিক্ত রাসায়ানিক সার। যেগুলো আবার কৃষকের নাগালের বাইরে। কৃষিবিদদের জরিপে দেখা গেছে ১৮-২০বছর আগে ফসল উৎপাদনের জন্য জমিতে ব্যবহার করত গোবর, চাষ করত দৈঞ্চা, পাট, যেগুলো দুই-তিন ফুট উ”ু হওয়া অবস্থাতেই জমিতে লাঙ্গলচাষ দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিত। জমিতে তৈরি হত সবুজ জৈব্য সার। যাতে ফসল উৎপাদনে জমি থাকত সক্ষম, ব্যবহার হতনা কোন রাসায়ানিক দ্রব্য, কিন্তু এখন আর সেগুরো ব্যবহার করা হয় না। কৃষকরা জানান ১২-১৫ আগে (৪২শতাংশ বিঘা) কাঠাপ্রতি জমিতে এক থেকে দেড় কেজি ইউরিয়া,এক কেজি টিএসপি আঁধা কেজি পটাশ ব্যবহার করলে অনেক ভাল ফসল হত কিন্তু বর্তমানে (৩৩শতাংশে)ব্যবহার করতে হচ্ছে তার ৫-৬ গুন। কাঠাপ্রতি জমিতে ৮-১০কেজি ইউরিয়া, ৫-৬কেজি টিএসপি, ২-৩কেজি পটাশ, সেই সাথে ব্যবহার করতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক। এদিকে জৈব্য সার গোবর জমিতে ব্যবহার না করে তৈরি করছে জালালী। আর ধৈঞ্চাত দেখাই যায় না। সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে এসেছে বিষাক্ত রাসায়ানিক সার ও হরেক রকমের কীটনাশক। যেগুলো সারাদেশের ছোট বড় বাজারে গিয়ে কৃষকদের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে, পরামর্শ দিয়ে বিক্রি করে ফায়দা লুটছে রীতিমত। অন্যদিকে জাতিকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে। প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের পরামর্শে কৃষক ভ’ল পথে চলার কারণে কৃষি জমি ইতিমধ্যে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে অক্ষম ও নিঃপ্রাণ হয়েগেছে। এ গুলো বর্তমান সময়ে ব্যবহার না করলে কৃষক যে ফসল ঘরে আনার কথা চিন্তাও করতে পারে না। এখন থেকেই যদি জমিতে জৈব্য সার ব্যবহার করে প্রান ফেরানোর চেষ্টা না করা হয় তাহলে কি হবে এদেশের অর্থনীতির ? কি হবে এ জাতির? মানুষ না খেয়ে মরবে এমনটায় মনে করছেন কৃষিবিদ ও সচেতন মহল। এমন হুমকির মুখ থেকে বাচতে হলে অতিসত্তর সরকার ও জনগনের একসাথে কাঁদে কাঁদ মিলে কাজ করতে হবে ফসলি জমির প্রাণ ফিরানোর জন্য। তাহলেই সম্ভব হবে, প্রাণ ফিরে পাবে ফসলি জমি। দেশের অর্থনীতি থাকবে স্থিতিশীল।
রিপোর্ট : সন্দীপ কুমার কর্মকার, যশোর।