জাতীয়করণের ৪৮ বছরেও হয়নি নতুন ভবন!
মোঃ খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, নড়াইল প্রতিনিধিঃ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার সালামাবাদ ইউনিয়নের জোকা-বাকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন সংকটের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছর পরে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। জাতীয়করণের ৪৮ বছর পার হলেও হয়নি কোন নতুন ভবন।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান শামীম রহমান উপজেলার ২৪ টি প্রাথমিক বিদ্যায়ের শ্রেণীকক্ষ সংকট নিরসনে নতুন ভবন নির্মানের তালিকা দেন। তালিকায় ১৯ নম্বরে অত্র স্কুলটি দৃশ্যমান। এছাড়া ওই বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মানের জন্য নড়াইল-১ এর সাংসদ কবিরুল হক মুক্তি বাজাস/এমপি/নড়া-০১/২০১৮/৫৮, ৫৯, ৬০ তিনটি স্মারকে ডিও প্রদান করেছেন এবং সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার শিশির বিশ্বাস এমপির ডিওটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে প্রেরণ করেছেন।
তালিকায় থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নতুন ভবনের কাজ হচ্ছেনা বলে ওই (শিশির বিশ্বাস) কর্মকর্তা জানান। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারণে পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে বলে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা জানান। এছাড়া মানবেতর পরিবেশে বাহিরে বেড়াবিহীন ছাপড়া ঘরে পাঠদান চলছে শিশু শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯৩৮ সালে স্থাপিত হয়। ৯৫ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠালগ্নে তিন কক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা ঘরে বিদ্যালয়টি চালু হয় এবং ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে পিইডিপি-২ এর নির্মানকৃত দি’কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ভবনটির ছাদে পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভারী বর্ষনে ভবনটির ছাদ থেকে পানি পড়ে তাই আশু সংস্কারের প্রয়োজন বলে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্কুল সংশ্লিষ্টরা জানান। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ঝড়ে পুরাতন ঘরের বারান্দার টিন উড়ে গেছে এবং দেয়ালের ইট খসে পড়ায় আমাদের ক্লাস করতে ভয় লাগে।
বর্ষাকালে ক্লাসরুমে বৃষ্টির পানির জন্য পাঠদান ব্যহত হয়। পানিতে বই-খাতা ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শরীফ শাহ আলম বলেন, আমি মাত্র এক বছর সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছি। আমার আগে যারা ছিল তারা যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। এছাড়া সালামাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল হক প্রিন্স ও বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মানের ব্যপারে বেশ দৌড়াদৌড়ি করেছেন।
ভৌগলিক কারণে বিদ্যালয়টি ইউনিয়নের মধ্যস্থানে হওয়ায় অত্র ইউনিয়নের ১৪ টি প্রাইমারী স্কুলের সমাপণী পরীক্ষা, মডেল টেষ্ট এবং আন্তস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগীতার আয়োজন সম্পাদনের জন্য কেন্দ্র হিসাবে এই স্কুলকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পাকা ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন এই তো হয়ে যাবে। কিন্তু হচ্ছেনা। প্রতিষ্ঠানটির টিনশেড ঘরটির নাজুক অবস্থা। শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় নতুন ভবন নির্মান খুবই জরুরী।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক রিপা রানী সাহা বলেন, অত্র বিদ্যালয়ে ১৭৫ জন শিক্ষার্থী আছে। নির্মানকালের পরে একটি দুই রুম বিশিষ্ট পাকা ভবন হয়েছে, যার একটি অফিস কক্ষ ও অপরটি ক্লাস রুম। ঝুকিপূর্ণ পুরাতন টিনসেড ঘরে ৩টি রুমে শিক্ষার্থীরা ভয়ে যেতে চায়না। তাই রুমের মাঝে পর্দা টানিয়ে ছয়টি ক্লাস পরিচালনা করা আমাদের জন্য খুবই কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে।
এছাড়া সমাপণিী পরীক্ষার কেন্দ্র থাকায় কক্ষ সংকটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় অত্র বিদ্যালয়ের নাম থাকায় নতুন ভবন নির্মানের অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনেক আগেই আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বার বার আশ্বাস দিলেও আমরা এর কোন সদুত্তর পাচ্ছিনা বলে তিনি জানান।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার দাশকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিক দিন ফোন দিলেও তিনি মিটিংএ বাহিরে আছেন এবং অত্র স্কুলের নতুন ভবনের তালিকায় নাম আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কালিয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশলীসহ (এলজিইডি) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলা হবে।